1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফর : র‍্যাবের জন্য সুখবর নেই

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৮ মে ২০২৪

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু'র ঢাকা সফরে দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ন প্রাধান্য পেয়েছে৷ কিন্তু দু' দিনের এ সফর থেকে কোনো ভালো বার্তা কি পেয়েছে বাংলাদেশ?

https://p.dw.com/p/4g0k5
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু ও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ বলেছেনন, ডোনাল্ড লু সম্পর্ককে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন৷ছবি: PID of the Bangladesh government

ঢাকায় ডোনাল্ড লু বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পরিবেশ মন্ত্রী, পররাষ্ট্র সচিবের পাশাপাশি নাগরিক সমাজ ও অধিকার কর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেছেন৷ দুই দিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকা ছেড়েছেন৷

ডোনাল্ড লু ঢাকায় থাকার সময় মার্কিন দূতাবাস এ সফর নিয়ে দুটি বিবৃতি দিয়েছে৷ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও গণতান্ত্রিক ভবিষ্যৎ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে রয়েছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে আমাদের আলোচনা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি গড়ে তোলা, কর্মশক্তি বৃদ্ধি, নিরাপত্তা সহযোগিতার উন্নতি, জলবায়ু সংকট মোকাবেলা এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আমাদের মূল্যবোধকে শক্তিশালী করার জন্য আমাদের যৌথ অঙ্গীকারকে পুনর্ব্যক্ত করেছে৷”
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসের চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন দূতাবাসের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "যুক্তরাষ্ট্র আন্তঃসীমান্ত জ্বালানি বাণিজ্যসহ পরিচ্ছন্ন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ, জীববৈচিত্র্য বজায় রাখতে ইকোসিস্টেম সংরক্ষণ, কৃষিখাতে গ্রিন হাউজ গ্যাস নির্গমন হ্রাস এবং জলবায়ু বিষয়ক কাজে নারী নেতৃত্ব ও যুব সমাজের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমৃদ্ধিতে সহায়তা করে৷ পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রীর সাথে এই সাক্ষাতে আমরা আনন্দিত, কারণ, আমরা আমাদের দুই দেশের অংশীদারিত্ব শক্তিশালী ও জোরদার করার লক্ষ্যে কাজ করছি৷”

৭ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর৷ ওই নিষেধাজ্ঞা ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যারা বাধা হবেন, তাদের জন্য৷ এর আগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র‍‍্যাব পুলিশের ১০ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়৷ নির্বাচনের আগে গত বছরের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করেছিলেন৷ তখন তার সফরের মূল প্রতিপাদ্যই ছিল বাংলাদেশের নির্বাচন৷ পরে তিনি শর্তহীন সংলাপের জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে চিঠি দেন৷ নির্বচনের পরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না' বলে প্রতিক্রিয়া জানায়৷

কিন্তু এখন পরিস্থিতি বদলাচ্ছে৷ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ডোনাল্ড লু৷ তখন তিনি বলেন," বাংলাদেশে আমি এসেছি আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্নির্মাণ করতে৷” তার কথা, ‘‘গতবছর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক অস্বস্তি ছিল৷ আমরা অনেক চেষ্টা করেছি বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতাবিহীন নির্বাচন যাতে অনুষ্ঠিত হয়৷ আমরা এখন সামনের দিকে তাকাতে চাই, পেছনের দিকে নয়৷”

তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও অন্যান্য অংশীদারিত্বমূলক সহযোগিতার সম্পর্ক এগিয়ে নিতে কাজ করার কথা জানান ৷

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.হাছান মাহমুদ বলেন, "তিনি (ডোনাল্ড লু) সম্পর্ককে ভিন্নমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন৷ সেই অভিপ্রায়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু বাংলাদেশ সফরে এসেছেন৷ আমাদের আলোচনা সে লক্ষ্যেই হয়েছে৷ তার সঙ্গে নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি৷ আমার সঙ্গে শুধু ইতিবাচক ইস্যু নিয়েই আলোচনা হয়েছে৷”

ডোনাল্ড লু তার এই সফরের সময় ঢাকার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেন৷ সেই সাক্ষাৎকারগুলোতেও তিনি সম্পর্কের উন্নয়ন ও সহযোগিতা বাড়ানোর কথা বলেছেন৷

আমার মনে হয়েছে তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে: নূর খান লিটন

ঢাকায় নগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও বৈঠক করেন ডোনাল্ড লু৷ ওই বৈঠকে উপস্থিতি ছিলেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছে ডয়চে ভেলে৷ তাদের একজন বলেন, "নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার নিয়ে যতটা সেচ্চার ছিল এবার ততটা নয়৷ এবার তারা আমাদের সঙ্গে মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছেন৷ তবে তা রুটিন ওয়ার্কের মতো৷ বৈঠকে উপস্থিত মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন," আমার মনে হয়েছে, তারা কৌশল পরিবর্তন করেছে৷ তারা আলাপ আলোচনা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, মানবাধিকার নিয়ে সরকারে সঙ্গে কাজ করতে চায়৷ নাগরিকদের জন্য ‘স্পেস' বাড়াতে চায়৷ চাপ প্রয়োগের পথে তারা এখন আর নেই৷ তবে এইসব বিষয় নিয়ে তারা তাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করেছে বলে মনে হয়নি৷ কিন্তু নির্বাচনের আগে তারা যতটা সক্রিয় ছিল, এখন অতটা নয়৷”
তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, "বিএনপি বা কোনো দল নিয়ে তিনি কথা বলেননি৷ তবে সার্বিকভাবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গ্রেপ্তার এগুলো নিয়ে কথা হয়েছে৷”

বেঠকে উপস্থিত বাংলাদেশ সেন্টার ফর উইমেন ওয়ার্কার্স সলিডারিটির নির্বাহী পরিচালক কল্পনা আক্তার বলেন," আমার সঙ্গে শ্রমিদের বিরুদ্ধে করা মামলা এবং শ্রম আইন সংস্কার নিয়ে কথা হয়েছে৷ অন্যদের সঙ্গে সংবাদমাধ্যম, নাগরিক অধিকার, নির্বাচনের পর পরিস্থিতি এবং মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেছেন তিনি৷”

সাবেক রাষ্ট্রদূত  মেজর জেনারেল (অব,) মো. শহীদুল হক মনে করেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এখন ভূ-রাজনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্য গুরুত্ব পাচ্ছে৷ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে তাদের কারা মিত্র হবে সেটা এখন তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷ সফরের আগে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতেও তা বলা হয়েছে৷ আর এই লক্ষ্যেই তিনি ভারত , শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশ একই সময়ে সফর করেছেন৷ তিনি বলেন, "এখানে চীন এবং মিয়ানমারকে কেন্দ্র করেই মার্কিন ভূরাজনীতি কেন্দ্রীভূত৷ সেক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশকে পাশে চায়৷ তারা মিয়ানমারের রাখাইন স্টেটকে নিয়ে ভিন্ন চিন্তা করছে৷ সেটা সফল হলে এই অঞ্চলে তাদের অবস্থান অনেক শক্ত হবে৷ আর চীন যাতে এখানে প্রভাব বাড়াতে না পারে সেই চেষ্টাও তাদের আছে৷ তারা এখন তাদের নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান কেমন তা দেখতে চায়৷”

‘‘স্কোয়াড নামে একটা নতুন সামরিক জোট হয়েছে৷ এটা চীনের বিরুদ্ধে৷ আর যদি ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যালায়েন্স জোরদার হয়, তাহলে ভূরাজনীতিতে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র অনেক সুবিধায় থাকবে৷ কোয়াড আছে৷ তবে সেটা সামরিক জোট নয়৷ আর মিয়ানমারকেন্দ্রিক অবস্থান যদি যুক্তরাষ্ট্র শক্ত করতে পারে, তাহলে তারা অনেক বেশি বাণিজ্যিক সুবিধা পাবে৷,” বলেন তিনি৷

তার কথা, ‘‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র মানবাধিকার এই বিষয়গুলো যে তারা বাদ দিয়েছে, তা নয়৷ তবে গুরুত্বের দিক থেকে নীচে নেমে গেছে৷ তারা এখন সময়ের বিবেচনায় কাজ করছে৷”

ভূরাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চায়: মুন্সি ফয়েজ আহমেদ

অন্যদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস)-এর সাবেক চেয়াররম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সি ফয়েজ আহমেদ মনে করেন, "নির্বাচনের আগে দুই দেশের মধ্যে যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছিল, বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল সেখান থেকে বেরিয়ে এসে সম্পর্ক আরো জোরদার করার জন্যই এই সফর হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে৷ আমাদের কাছে যে তথ্য আর খবর আছে তাতে দুই দেশের সম্পর্ক এখন তারা আরো ভালোভাবে এগিয়ে নিতে চায়৷”

তার কথা, ‘‘এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং ভূ-রাজনীতি দুটোই আছে৷ লু তো নিজেই বোয়িং বিক্রির কথা বললেন৷ আমাদের বঙ্গোপসাগরে তারা তেল, গ্যাস অনুসন্ধানে খুব আগ্রহী৷ এছাড়া জলবায়ু, রোহিঙ্গা ইস্যু তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷ আমাদের কাছেও৷ তারা ইন্দোপ্যাসিফিক আলোচনার মাধ্যমে ভূরাজনীতিতে এখানে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে চায়৷”

তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচনের আগে তারা যা বলেছেন, সেটা ছিল তাদের আরেকটি কৌশল৷ কারণ, নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়৷ তাই তখন তারা সেই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কথা বলেছে৷ এখন নির্বাচন হয়ে গেছে, তাই তারা নতুন প্রেক্ষাপটে কথা বলছে৷”

তিনি বলেন, "গণতন্ত্র, নিষেধাজ্ঞা, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা হয়েছে৷ র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে আসলে কী হবে তা এখনো বলা যায় না৷ তবে লেবার রাইটের ব্যাপারে তারা কোনো নতুন করে বাংলাদেশের জন্য কোনো স্ট্যান্ডার্ড সেট করবে না৷ আইএলওর মানই তারা অনুসরণ করবে৷ এটা আমাদের জন্য ভালো৷”

এদিকে ডোনাল্ড লুর বাংলাদেশ সফরে র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কোনো কথা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল৷ বৃহস্পতিবার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "এসব দাবি মিথ্যা৷

যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করছে না৷ এই দাবিগুলো মিথ্যা৷ নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হল আচরণের পরিবর্তন এবং জবাবদিহিতার প্রচার৷'' ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার দ্য ডেইলি স্টারের খবর অনুযায়ূী, ডোনাল্ড লু'র সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দাবি করেছিলেন, লু জানিয়েছেন র্যাবের ওপরের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের উদ্যোগকে তারা সমর্থন করবেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান